রেকর্ড বৃষ্টি, উজানের পানি ও নদী ভাঙ্গনে প্লাবিত ফেনীর ৩০ গ্রাম খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র, বন্যা আতংকে আশ্রয় কেন্দ্রে গুলোতে ছুটছে মানুষ। দীর্ঘ মেয়াদী বন্যার প্রস্তুতি। ফেনী শহরে সড়কের পানি কমেছে।
 

ফেনীতে সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমান বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ১৩ টি স্থান ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো মানুষ। 

৮ জুলাই সোমবার বিকেল থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে এবং তা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের মধ্যম ধনীকুন্ডা, নোয়াপুর, শালধর এলাকায় তিনটি, ফুলগাজী উপজেলার দেড়পাড়ায় দুইটি, নাপিত কোনায় একটি স্থান সহ প্রায় ৯ টি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। 

এছাড়া সিলোনিয়া নদীর মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম গদানগর, জঙ্গলঘোনা, উত্তর মনিপুর দাসপাড়া ও মেলাঘর কবরস্থানের পাশে চারটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অন্তত ১৫ গ্রামের হাজারো মানুষ। 

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত পাঁচটি স্থানে ভাঙনের তজথ্য পেয়েছি। আরও খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানব। মাঠপর্যায়ে আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে। 

এদিকে টানা বর্ষণে ফেনী শহরের ডাক্তারপাড়া, শহীদ শহিদুল্লা কায়সার সড়ক, পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিস, শাহীন একাডেমি এলাকা, পাঠানবাড়ি, নাজির রোড, মিজান রোড, একাডেমি, সদর হাসপাতাল মোড় ও পেট্রোবাংলাসহ বিভিন্ন এলাকা ও সড়কের পানি গত কাল মঙ্গলবার কোমর পর্যন্ত থাকলেও এখন অনেকটা  নেমে গেছে।
 
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, জেলায় টানা দুই দিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার (৯ জুলাই) সকাল  পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৪০  মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিগত কয়েক বছরে সর্বোচ্চ। আগামী ২-৩ দিন জেলাজুড়ে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, গত কাল ৮ জুলাই দুপুরে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোর বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

এদিকে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে দুই উপজেলায় মোট ১৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবারের জন্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৯ জুলাই) সকাল ১০ টার দিকে ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ফুলগাজী উপজেলায় ৩২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরশুরাম উপজেলায় ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে শুকনো ও রান্না করা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।