প্রকাশিত: / বার পড়া হয়েছে
একুশে ফেব্রুয়ারি আসার এখনও এক মাস বাকি থাকলেও ১৯৫২ সালের এ দিনে মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মৃতির স্মরণে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের একুশে পদক প্রদানের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। একুশে পদক প্রদানের অন্যতম উদ্দেশ্য বাংলা ভাষার জন্য যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের সেই আত্মত্যাগের মহিমাকে চিরজাগ্রত রাখা।
আজ থেকে ৪৯ বছর আগে ১৯৭৬ সালে একুশে পদক প্রবর্তন করা হয়। এটি রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক। প্রতি বছরের মতো এবারও একুশে পদকের জন্য ২৫ জন সুধী ও এক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ তালিকা থেকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। এরপর সরকারপ্রধানের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। সরকারপ্রধান তার এখতিয়ারে প্রস্তাবিত নাম থেকে কোনো নাম বাদ দিতে পারেন। আবার নিজের মতো করে নতুন নাম সংযোজন করতে পারেন।
একুশে পদক চূড়ান্ত বাছাইয়ের জন্য শিগগিরই জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে। এবার এ কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
চলতি বছরের ২৬ জন সুধী ও প্রতিষ্ঠানের জন্য একুশে পদক পাওয়ার ক্ষেত্রে যারা প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখা তিনজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- আবু জায়েদ শিকদার (মরণোত্তর), বেগম মাজেদা বেগম ও বদিউল আলম চৌধুরী (মরণোত্তর)।
শিল্পকলার ক্ষেত্রে ১১ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- নৃত্যে লুবনা মরিয়ম, চলচ্চিত্রে আজিজুর রহমান (মরণোত্তর), সংগীতে ড. নাশিদ কামাল, শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, বেবী নাজনীন, উস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া (মরণোত্তর), সাইদুর রহমান বয়াতি, যন্ত্রসংগীতে সুনীল চন্দ্র দাস, আলোকচিত্রে নাসির আলী মামুন
, চিত্রকলায় রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা, চারুকলায় অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সাত্তার। আর এ বি এম নুরুদ্দীনের (কাপ্তান নূর) নাম প্রস্তাব করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য।
সাংবাদিকতায় দুজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তারা হলেন- মাহফুজউল্লা (মরণোত্তর) ও আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। গবেষণায় অবদানের জন্য একটি ও একজন গবেষকের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মৃত্তিকা বিভাগ। আর গবেষক হলেন ড. এসএম মফিজুল ইসলাম।
শিক্ষা ক্ষেত্রেও দুজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তারা হলেন- অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক ও ড. মঞ্জুর করিম পিয়াস (মরণোত্তর)। বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে মেহেদী হাসান খান, অর্থনীতিতে মুহাম্মদ আনিসুর রহমানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে যিনি আনু মুহাম্মদ নামে সুপরিচিত।
সমাজসেবায় প্রস্তাব করা হয়েছে মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর (মরণোত্তর) নাম। ভাষা সাহিত্যে তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তারা হলেন- ড. নিয়াজ জামান, কবি হেলাল হাফিজ (মরণোত্তর) ও শহীদুল জহির (মরণোত্তর)।
গত ১৭ ডিসেম্বর সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সভাপতিত্বে একুশে পদক প্রদান সংক্রান্ত বাছাই কমিটির সাব-কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছরের জন্য মোট ১৪৫টি মনোনয়ন প্রস্তাব আসে। এর মধ্যে ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে ১০, শিল্পকলার ক্ষেত্রে ৪০, মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে ৩, সাংবাদিকতায় ৪, গবেষণায় ১৮, শিক্ষা ১০, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ৩, অর্থনীতি ক্ষেত্রে ২, সমাজসেবা ক্ষেত্রে ২৬ এবং ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে ২৭টি প্রস্তাব পাওয়া যায়। এ ছাড়াও সরকার নির্ধারিত ক্ষেত্রে ২টি মনোনয়ন প্রস্তাব পাওয়া যায়। এসব মনোনয়ন থেকে পদকের নীতিমালা অনুযায়ী ২৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়।
সবশেষ ২০১৯ সালে একুশে পদকের নীতিমালা তৈরি করা হয়। এ নীতিমালার আলোকে একুশে পদকের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। এ পুরস্কারের মান ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণপদক, নগদ ৫ লাখ টাকা ও সম্মাননা।