Wednesday, 22 January, 2025
Logo

বিএসএমএমইউতে সচেতনতামূলক সেবাবুথের উদ্বোধন

অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত: / বার পড়া হয়েছে


ছবি - সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রতিবছর নতুনভাবে প্রায় ৮ হাজার ২৬৮ জন মহিলা জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় আর মৃত্যুবরণ করেন  ৪৯৭১ জন মহিলা। একইভাবে দেশে প্রতিবছর নতুনভাবে প্রায় ১৩ হাজার ২৮ জন মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং ৬৭৮৩ জন মহিলা মারা যায় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

তারা বলেন, দেশে মহিলাদের মৃত্যুর প্রধানতম দুটি কারণ হল জরায়ু-মুখ ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার। আর স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সার পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন নেওয়ার মাধ্যমে এই মরণব্যাধি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ‘জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষে বহির্বিভাগে ২টি মাসব্যাপী সচেতনতামূলক সেবাবুথের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা এসব তথ্য জানান। এর আগে সচেতনতামূলক র‌্যালিটি অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের  বি ব্লকের সামনে বটতলা থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসএমএমইউ  কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার। এসময় এস্টাবলিশমেন্ট অব ন্যাশনাল সেন্টার ফর সার্ভিক্যাল এন্ড ব্রেষ্ট ক্যান্সার স্ক্রীনিং এন্ড ট্রেনিং এ্যাট বিএসএমএমইউ প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা, গাইনোকলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শিরিন আক্তার বেগম, অধ্যাপক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস, অধ্যাপক ডা. ফওজিয়া হোসেন প্রমুখসহ  বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সার পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন নেয়ার মাধ্যমে এই মরণব্যাধি প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্তন ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য সিবিই, জরায়ু-মুখ ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য ভায়া টেস্ট করা অত্যন্ত জরুরি। সাথে সাথে  জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে মহিলাদের ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

এসময় চিকিৎসকরা জানান, বিশ্বে মহিলাদের যত ধরনের ক্যান্সার হয় তার মধ্যে জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার অন্যতম। জরায়ু-মুখ ক্যান্সার বিশ্বজুড়ে মহিলাদের ক্যান্সারের মধ্যে চতুর্থতম এবং ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর চতুর্থতম শীর্ষ কারণ। এছাড়া, স্তন ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশে উভয় ক্ষেত্রেই শীর্ষস্থানীয় ক্যান্সার। বাংলাদেশে মহিলাদের মৃত্যুর প্রধানতম দুটি কারণ হল জরায়ু-মুখ ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার। এই দুটি ক্যান্সার গুরুত্বপূর্ণ নন-কমিউনিকেবল ডিজিসেস হিসেবে বিবেচিত।

তারা জানান, জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর বেঁচে থাকা অনেকাংশে নির্ভর করে, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও কার্যকরী চিকিৎসা প্রদানের উপর। দেরীতে রোগ সনাক্তকরণ হলে সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা দেয়া কঠিন বিধায় মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই এসব রোগের চিকিৎসা সুবিধা সীমিত ও ব্যয়বহুল। প্রাথমিক পর্যায়ে জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার সনাক্ত করা গেলে মৃত্যু সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।

চিকিৎসকরা জানান, মহিলাদের মধ্যে প্রতিবছর নতুনভাবে জরায়ু-মুখ ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলাদের হার যথাক্রমে প্রতি লক্ষে ১২ ও ১৯ জন। যেহেতু, প্রতি বছর জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করছে ৫ হাজার ২১৪ জন এবং স্তন ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করছে ৬ হাজার ৮৪৬ জন মহিলা। এছাড়া অন্তত ২-৩ শতাংশ ত্রিশোর্ধ মহিলা ক্যান্সারপূর্ব অবস্থায় আছেন।

অনুষ্ঠানে  চিকিৎসকরা জানান, বর্তমানে ত্রিশোর্ধ বয়সী মহিলা রয়েছেন প্রায় ৩,২৭,৫০,০০০ জন। এ হিসাবে বাংলাদেশে অন্তত ৬,৫৫,০০০ থেকে ৯,৮২,৫০০ জন মহিলা ক্যান্সারপূর্ব/ক্যান্সার অবস্থায় আছেন। জরায়ু-মুখ ক্যান্সার কমানোর জন্য ক্যান্সার পূর্বাবস্থা/ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলাদের খুঁজে বের করে তাদের চিকিৎসা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অনুষ্ঠানে  জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সাল হতে মহিলাদের জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সারের মৃত্যুহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছেন এবং সারা বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০টি সেবা কেন্দ্রে  (বিএসএমএমইউ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ও হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, নির্বাচিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে) বিনামূল্যে জরায়ু-মুখ এবং স্তন ক্যান্সার স্ক্রীনিং সেবা চালু করতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়াও, সরকার দেশের ৩৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিএসএমএমইউ-এ জরায়ু-মুখ ক্যান্সার নিশ্চিতরূপে নির্ণয়ের নির্ণয়ের জন্য কল্পোস্কোপি পরীক্ষা ও এসংক্রান্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন। দেশের প্রতিটি জেলায় তিন থেকে চারটি সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স ও মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীগণ নিয়মিত জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রীনিং ও এসংক্রান্ত তথ্য প্রদান করছেন। জরায়ু-মুখ স্ক্রীনিংকৃত মহিলাকে একইসময়ে সিবিই পরীক্ষার জন্য কাউন্সিলিং করা হয়। ত্রিশ বছরের অধিক বয়সী সকল মহিলাদের ভায়া ও সিবিই সেবা প্রদান করা হয় এবং সিবিই স্ক্রীনিংকৃত মহিলাদেরকে কিভাবে নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা (SBE) করতে হয় তা শিখিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সরকার ৩০-৬০ বছর বয়সী বিবাহিত সকল মহিলাদের প্রতি তিন বছর পর পর ভায়া পরীক্ষা বিনামূল্যে ব্যবস্থা করেছেন।
 

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত