প্রকাশিত: / বার পড়া হয়েছে
হোয়াইট হাউজের মসনদে দ্বিতীয়বার বসার পর চলতি সপ্তাহে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সফরে উপসাগরীয় একাধিক দেশ তার ভ্রমণসূচিতে থাকলেও তালিকায় নেই অন্যতম মার্কিন মিত্র ইসরায়েল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
গাজায় চলমান যুদ্ধসহ একাধিক ইস্যুতে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ থেকে বিভিন্ন রকম স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করবেন ট্রাম্প। আগের মেয়াদে ২০১৭ সালে মধ্যপ্রাচ্য সফরে আঞ্চলিক রাজপরিবারে সমর্থনের বিনিময়ে সুসম্পর্ক গড়ে তোলায় মনোযোগী ছিলেন তিনি। তারই ধারাবাহিকতায় এই সফরে বন্ধুপ্রতিম ধনী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং প্রযুক্তি সংক্রান্ত চুক্তি নিশ্চিতের চেষ্টা করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বৈঠকে জ্বালানি তেল বাণিজ্য, বিনিয়োগ, গাজা ও ইয়েমেন সংকট এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিসহ একাধিক বিষয় তার আলোচ্যসূচিতে থাকবে।
তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, এই সফরে মার্কিন স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে দাবি করাই হবে ট্রাম্পের প্রধান উদ্দেশ্য।
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের সিনিয়র ফেলো স্টিভেন এ কুক বলেন, ট্রাম্প চাইবেন সফর থেকে শত শত কোটি ডলারের একাধিক চুক্তির ঘোষণা দিতে। তার পররাষ্ট্রনীতি মূলত অর্থনৈতিক রাষ্ট্রনীতি দ্বারা প্রভাবিত। উপসাগরীয় ধনী রাষ্ট্রগুলোর বিপুল পরিমাণ অর্থকে তিনি মার্কিন বিনিয়োগের উৎস হিসেবে বিবেচনা করেন।
ট্রাম্প ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন যে, সৌদি আরব এক ট্রিলিয়ন ডলার মার্কিন অর্থনীতিতে বিনিয়োগে সম্মত হয়েছে এবং তিনি স ফরে আরও বড় অঙ্কের বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে চান।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও উন্নত সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি এবং বেসামরিক পরমাণু বিদ্যুৎ কাঠামো প্রযুক্তি চাইবে। এই সুবিধার জন্য সৌদি আরবের ওপর আগে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার শর্ত থাকলেও এবার ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, এই দুটি ইস্যু এখন আর পরস্পর সংযুক্ত নয়।
এই সফরের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ইসরায়েল সফর ট্রাম্পের ভ্রমণসূচিতে নেই। এদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার মন্ত্রিসভা গাজায় সামরিক আগ্রাসনের মাত্রা আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে।
গাজা যুদ্ধ এই সফরের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ সৌদি আরব পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার সুস্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না। পাশাপাশি, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্য আরব দেশে বিতাড়নের মার্কিন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে জটিল অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ থাকায় অনেকের সন্দেহ, ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে কার্যকর ও সুসংহত কোনও পরিকল্পনা রয়েছে কিনা। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠদের অনেকে মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্ব দিয়ে চীন ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলই মূলত মার্কিন প্রশাসনের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে কুক বলেছেন, প্রেসিডেন্ট যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছেন, তা কোনও সুসংহত কৌশল তৈরি করছে না। তার মূল অগ্রাধিকার হলো যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক বিনিয়োগ নিশ্চিত করা।